Sunday 13 May 2012

জুয়ার অপকারিতা



জুয়া খেলাতে বহু অপকারিতা রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি নিন্মে তুলে ধরা হলোঃ

১. জুয়ার মধ্যে লাভ ও ক্ষতি উভয়বিধ সম্ভাবনা থাকে। এতে বিজয়ী ব্যক্তির কেবল লাভই লাভ। আর পরাজিত ব্যক্তির ক্ষতিই ক্ষতি। এ খেলায় পরাজিত ব্যক্তির মাল বিজয়ীর হাতে চলে যায়। এতে যে ব্যক্তি লাভবান হয়, সে পরোপকারের ব্রত থেকে দূরে সরে ক্রমেই রক্তপিপাসুতে পরিণত হয়ে পড়ে। জয়লাভকারী ব্যক্তি রাতারাতি টাকার পাহাড় গড়ে তোলে। আর পরাজিত ব্যক্তি দিন দিন সম্পদ হারা হতে থাকে। জুয়াড়ী ব্যক্তির হাতে টাকা-পয়সা না থাকলে সে সম্পদ বিক্রি করে প্রয়োজনে ঘরের সামানপত্র এমনকি ঘর বিক্রি করেও এ খেলায় অংশগ্রহন করে থাকে। তাতেও সম্ভব না হলে চুতি, ডাকাতি করে হলেও খেলায় অংশগ্রহনের চেষ্টা করে থাকে। জুয়া খেলার সাথে চোর-ডাকাতের এবং খারাপ লোকদের সম্পৃক্ততাই সবচেয়ে বেশি। মোটকথা, এ খেলায় যেমন অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়, তেমনি এতে মানুষের চারিত্রিক ক্ষতিও রয়েছে চরমভাবে।

২. জুয়ায় অভ্যস্ত ব্যক্তি ক্রমান্বয়ে উপার্জনের ব্যপারে অলস, উদাসীন ও নিস্পৃহ হয়ে যায়। তার একমাত্র চিন্তা থাকে বসে-বসে বাজির মাধ্যমে অন্যের মাল হাতিয়ে নেওয়া, যাতে কোন পরিশ্রমের প্রয়োজন না হয়। এমনি করে অলস হয়ে তারা দেশ ও দশের উন্নয়নে আর কোন অবদান রাখতে পারে না।

৩. জুয়ার আরেকটি ক্ষতিকর দিক হচ্ছে জুয়াও মদের মতো পরষ্পরের মধ্যে ফ্যাসাদ ও বেদ্বেষ সৃষ্টি করে। কেননা পরাজিত ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবেই জয়ী ব্যক্তির প্রতি হিংসা ও বিদ্বেষ পোষন করে এবং শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। জুয়ার জয়-পরাজয় এক পর্যায়ে মারামারি এমনকি হত্যাকান্ড পর্যন্ত পৌছিয়ে দেয়।

৪. জুয়াড়ী ব্যক্তি জুয়ার নেশায় মদখোর ব্যক্তির ন্যায় মাতাল অবস্থায়ই থাকে সর্বদা। এ কারনে সে ছেলেমেয়ে, স্ত্রী ও আত্মীয় কারোর খবর রাখতে পারে না। ফলে জুয়াড়ী ব্যক্তি তার পরিবার-পরিজনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারে না, ছেলেমেয়েদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত বানাতে পারে না। বরং তারাও পিতার দেখাদেখি ঐ সর্বনাশা খেলায় আংশগ্রহণের প্রয়াস পায়। এমনি করে জুয়াড়ী ব্যক্তির পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়। জুয়ারী ব্যক্তির মেজাজে সর্বদা রুক্ষতা ও নিষ্ঠুরতা বিরাজমান থাকে। লাভবান ব্যক্তি আরো লাভের নেশায় মাতাল হয়ে উঠে। আর পরাজিত ব্যক্তি প্রতিশোধের নেশায় উন্মাদ হয়ে উঠে। তাই স্ত্রী, ছেলেমেয়েদের সাথে বিবাদ, ঝগড়া ও অশান্তি সর্বদা লেগেই থাকে। বর্তমানে স্ত্রী কর্তৃক স্বামী হত্যা বা স্বামী কর্তৃক স্বামী হত্যা, এ জাতীয় লোমহর্ষক ঘটনার পেছনে জুয়ার প্রভাবকে খাটো করে দেখা যায় না।

৫. জুয়ার সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতির দিকটি হলো, এ খেলায় মানুষ আল্লাহ্‌ বিমুখ এবং নামায-রোজা তথা ইবাদত-বন্দেগীর ব্যপারে চরমভাবে উদাসীন ও গাফিল হয়ে যায়। কেননা জুয়াড়ী ব্যক্তির এক্মাত্র ধ্যান-ধারনা, কেমন করে আরো টাকা হাসিল করা যায় অথবা কেমন করে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়া যায়। কাজেই জুয়ার এ সর্বনাশা গ্রাস থেকে বেঁচে থাকা অপরিহার্য।

Saturday 12 May 2012

শরী'আতের দৃষ্টিতে জুয়া



ইসলামী শরী'আতে জুয়া হারাম। একাধিক আয়াত ও হাদীসে এ সম্পর্কে স্পষ্ট বিবরণ রয়েছে। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছেঃ
হে মু'মিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তি পূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণয়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর, তাহলেই তোমরা সফলকাম হতে পারবে। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহ্‌র স্মরণে ও নামায আদায়ে বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না। (সূরা মাদিয়া, ৫:৯০-৯১)।

এ আয়াতে মদ ও জুয়াকে ঘৃণ্য বস্তু আখ্যায়িত করা হয়েছে। এগুলোকে শয়তানের কাজ বলা হয়েছে। মদ ও জুয়াকে একই পর্যায়ভুক্ত করে মূর্তিপূজার সাথে মিলিয়ে বর্ণনা করাআ হয়েছে। আয়াতে এগুলো থেকে দূরে থাকার হুকুম করা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে, এতে পরষ্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। অধিকন্তু এর দ্বারা শয়তান মানুষকে নামায আদায় করা এবং আল্লাহ্‌র স্মরণ থেকে বিমুখ রাখে। কাজেই মদের ন্যায় জুয়াও হারাম। এর হারাম হওয়ার বিষয়টি কুরআন মজীদের অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। যদি কেউ এই হুকুমকে অস্বীকার করে, তবে সে কাফির বলে গণ্য হবে।[ক]

এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ্‌ (সা.) বলেনঃ
কেউ যদি তার সাথীকে বলে, এসো জুয়া খেলব। তাহলে (এ কথার অপরাধের কারনে) সাদাকা করা তার উপর অপরিহার্য।[খ]

অতএব, জুয়াকে অর্থ উপার্জনের উপায় হিসেবে গ্রহণ করা যেমন কোন মুসলমানের জন্য জায়িয নেই, তেমনি একে খেলা, মনের সান্ত্বনা, তৃপ্তি ও অবসর বিনোদনের উপায়রূপে গ্রহণ করাও বৈধ হতে পারে না।


ক. জাওয়াহিরুল ফিক্‌হ, ২য় খন্ড, পৃ. ৩৩৮-৩৩৯।
খ. আল-হালাল ওয়াল-হারাম ফিল ইসলাম, পৃ. ২৯৫।

জুয়ার সংজ্ঞা ও পরিচয়



জুয়াকে আরবীতে 'মায়সির' ও 'কিমার' বলা হয়। বস্তুত মায়সির ও কিমার এমন খেলাকে বলা হয়, যা লাভ ও ক্ষতির মধ্যে আবর্তিত থাকে। অর্থাৎ যার মধ্যে লাভ বা ক্ষতি কোনটাই স্পষ্ট নয়।[ক]

তাফসীরে মা'আরিফুল কুরআনে উল্লেখ রয়েছে যে, যে ক্ষেত্রে কোন মালের মালিকানায় এমন সব শর্ত আরোপিত হয়, যাতে মালিক হওয়া না হওয়া উভয়েরই সম্ভবনা থাকে। ফলে এতে লাভ কিংবা লোকসান উভয় দিকই বজায় থাকে।[খ]
যেমন দুই ব্যক্তি পরষ্পর একে অপরকে বাজি ধরে বলল, যদি তুমি দৌড়ে অগ্রগামী হতে পার, তাহলে তোমাকে এক হাজার টাকা দিব। আর যদি আমি অগ্রগামী হই, তবে তুমি আমাকে এক হাজার টাকা প্রদান করবে। এ ক্ষেত্রে লাভ ও লোকসান অস্পষ্ট। জাহিলী আমলে নানা ধরনের জুয়ার প্রচলন ছিল।

বর্তমান কালে প্রাচীন পদ্ধতি ছাড়াও জুয়ার ক্ষেত্রে আরো বহু নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। যেমন হাউজী, টাকা বাজি রেখে ঘোড় দৌড় ও তাস খেলা ইত্যাদি। এগুলো সবই হারাম। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, শুধু নাম পরিবর্তনের কারনে বস্তুর হাকীকত (মূল প্রকৃতি) এবং হুকুম পরিবর্তন হয় না। কাজেই প্রাচীনকালে প্রচলিত জুয়া সম্পর্কে যে হুকুম প্রযোজ্য ছিল, আধুনিক কালের জুয়ার ক্ষেত্রেও সে হুকুম প্রযোজ্য হবে।


ক. জাওয়াহিরুল ফিক্‌হ, ২য় খন্ড, পৃ. ৩৩৬।
খ. শামী, ৫ম খন্ড, পৃ. ৩৫৫।

উপার্জনের অবৈধ উপায়



ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উপার্জনের প্রক্রিয়া এবং উপার্জিত বস্তু উভয়ই বৈধ ও হালাল হওয়া অপরিহার্য। অনুরূপভাবে, উপার্জনের অবৈধ পন্থা অবলম্বন এবং হারাম বস্তুর উপার্জন থেকে বেচে থাকাও আবশ্যক।

লেনদেনের এমন প্রত্রিয়া যা পাপ অথবা এমন বস্থুর বেচাকেনা করা যার মূলগত দিক অপবিত্র অথবা যে সব লেনদেনে প্রতারনা বা ধোঁকা রয়েছে বা যাতে অন্যের ক্ষতির আশংকা রয়েছে, উপার্জনের এ জাতীয় প্রক্রিয়া ইসলামের অর্থনীতির দৃষ্টিতে হারাম। যেমন সুদ, ঘুষ, জুয়া ও লটারি, প্রতারনা, ওজনে কম দেওয়া, ভেজাল মিশানো, হারাম বস্তুর ব্যবসা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও জবর-দখল এবং মজুতদারী ও কালোবাজারি ইত্যাদি।

Sunday 29 April 2012

শেয়ার ব্যবসা





ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বর্তমানে একটি নতুন বিষয় সংযোজিত হয়েছে। এর নাম হচ্ছে শেয়ার ব্যবসা। প্রাচীনকালে কয়েক ব্যক্তির সমন্বয়ে শিরকত বা অংশীদারীত্বের ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়ম প্রচলিত ছিল। একে বর্তমান কালের পরিভাষা অনুসারে 'পার্টনারশিপ ব্যবসা' বলা হয়। বিগত দু'তিন শতাব্দী হতে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি নামে শরীকানা ব্যবসার আরেকটি পদ্ধতি চালু হয়েছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন পরিস্থিতে সৃষ্টি হয়েছে। শেয়ার বেচাকেনা চালু হয়েছে এবং এর ভিত্তিতে স্টক মার্কেটিং-এর ব্যবসা শুরু হয়েছে পৃথিবীব্যপী।

উল্লেখ্য যে, কোম্পানির এই শেয়ারকে আরবীতে 'সাহম' বলা হয়। সা্‌হম অর্থ অংশ। বস্তুত শেয়ার ও কোম্পানির মালের শেয়ার হোল্ডারদের মালিকানাধীন এক অংশবিশেষেরই নাম। কেউ যদি কোন কোম্পানির শেয়ার খরীদ করে তবে শেয়ার সার্টিফিকেটের কাগজটি এই কথাই প্রমান করে যে, উক্ত ব্যক্তি এ কোম্পানির বিশেষ একটি অংশের মালিক।

আগের যুগে মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি ছিল ছোট। দু'চারজন মিলে কিছু পুঁজি সংগ্রহ করে ব্যবসা-বাণিজ্য আরম্ভ করে দিতো। কিন্তু বড় ধরনের কোন ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হলে অথবা কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হলে অনেক সময় এই গুটিকয়েক মানুষের পক্ষে তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই অনিবার্য কারনেই বড় ধরনের ব্যবসা করার জন্য বা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য কোম্পানি গঠন করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। এ পর্যায়ে নিয়ম হলো, যখন কোন কোম্পানি আত্মপ্রকাশ করে, তখন এর উদ্যোক্তাগণ এর গঠন কাঠামো এবং পরিচালনা পদ্ধতি প্রকাশ করে। বাজারে শেয়ার ছাড়ে অর্থাৎ লোকদেরকে এ কোম্পানির অংশীদার হওয়ার জন্য আহবান জানায়। তাদের আহবানে সাড়া দিয়ে যারা এ শেয়ার খরীদ করে, তারা এ কোম্পানির অংশীদার হিসেবে গণ্য হয়। নবগঠিত কোম্পানির শেয়ার এক শর্তে খরীদ করা জায়িয। তা হচ্ছে, হারাম কাজের উদ্দেশ্যে এ কোম্পানি গঠিত হবে না। হারাম কাজের উদ্দেশ্যে কোন কোম্পানি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হলে এ কোম্পানির শেয়ার খরীদ করা কোনক্রমেই জায়িয হবে না। অবশ্য কোন ব্যক্তি যদি স্টক মার্কেট হতে শেয়ার খরীদ করে, তবে তাকে চারটি শর্তের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবেঃ

১. কোম্পানির যাবতীয় কারবার হালাল হতে হবে। কোম্পানি কোনরূপ হারাম কাজে জড়িত হতে পারবে না। যেমন সুদী ব্যাংক না হওয়া, ইনস্যুরেন্স কোম্পানি না হওয়া এবং মদ উৎপাদনের কোম্পানি না হওয়া ইত্যাদি। কোম্পানি হারাম কারবারে লিপ্ত হলে এর শেয়ার খরীদ করা কোন অবস্থাতেই জায়িয হবে না। প্রথমত শেয়ার ছাড়ার অবস্থায়ও জায়িয হবে না এবং পরবর্তীতে স্টক মার্কেট হতেও খরীদ করা জায়িয হবে না।

২. কোম্পানির গোটা-অর্থ লিকুইড এসেট্‌স নগদ টাকা হবে না। বরং কোম্পানির কিছু অর্থ-সম্পদ ফিক্সড আসেট্‌স স্থাবর সম্পত্তি থাকা আবশ্যক। কোম্পানির যদি কোন স্থাবর সম্পত্তি না থাকে, তবে শেয়ার সমুহ-এর মূল দাম থেকে কম বা বেশি দামে বিক্রি করা জায়িয হবে না। বরং এ অবস্থায় তা মূল দামেই বিক্রি হবে। মূল দামের কম বা বেশিতে বিক্রি করা হলে তা সুদে পরিণত হবে। অর্থাৎ দশ টাকার সেয়ার এগার টাকাতেও বিক্রি করা জায়িয হবে না।

৩. কোম্পানি যদি নিজেদের ফান্ড বাড়ানোর জন্য ব্যাংক থেকে সুদ্ভিত্তিক ঋণ গ্রহন করে অথবা অতিরিক্ত অর্থ যদি সুদী একাউন্টে জমা রাখে, তবে এমতাবস্থায় কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করা জায়িয হবে কিনা, এ সম্বন্ধে আলিমগনের একাধিক মত রয়েছে। কোন কোন বিশেষজ্ঞ আলিমের মতে, এ অবস্থায় এ কোম্পানির শেয়ার খরীদ করা জায়িয হবে না। বিজ্ঞ উলামায়ে কিরামের মতে, কোন শেয়ার হোল্ডার যদি এ সুদী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে, বিশেষভাবে বার্ষিক মিটিংয়ে এ বিষয়ে প্রতিবাদ করে, তবে তার জন্য এ শেয়ার খরীদ করা জায়িয হবে এবং সে দায়িত্ব মুক্ত বলে বিবেচিত হবে।

৪. মনে রাখতে হবে, কোম্পানির মূল ব্যাবসা যদি হালাল হয় এবং পরবর্তীতে এর মধ্যে যদি কোন সুদী পয়সা এসে যায়, তবে লভ্যাংশ বন্টনের সময় ইনকাম স্টেটমেন্টের মাধ্যমে এ কথা জেনে নিতে হবে যে, লভ্যাংশের মাঝে কত পারসেন্ট সুদের অংশ রয়েছে। যে পরিমাণ সুদের অংশ থাকবে ঐ পরিমান টাকা হিসাব করে গরীব ও দুঃস্থ মানুষের মধ্যে তা বিতরণ করে দিবে। অন্যথায় সুদ গ্রহনের গুনাহে গুনাহ্‌গার হতে হবে।

মোটকথা হচ্ছে, শেয়ার ক্রয় বৈধ হওয়ার জন্য চারটি শর্ত লক্ষণীয়ঃ
১. ব্যবসা হালাল হতে হবে।
২. কোম্পানির কিছু স্থাবর সম্পত্তি থাকতে হবে। সমস্ত সম্পদ নগদ টাকায় না হওয়া আবশ্যক।
৩. কোম্পানি সুদী কারবারে জড়িত হলে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে।
৪. লভ্যাংশ বন্টনের সময় এতে সুদী টাকা থাকলে হিসাব করে তা কাউকে দিয়ে দিতে হবে।[ক]



ক. জাদীদ ফিক্‌হী মাসাইল, ১ম খন্ড, মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানী।

প্রফিডেন্ট ফান্ড



প্রফিডেন্ট ফান্ড হলো, ঐ টাকা যা সরকার বা কোন কোম্পানি তার কর্মচারীদের বেতন থেকে বাধ্যতামূলক কেটে রাখে। এরপর কর্মচারীদের চাকরি শেষে বা মৃত্যুর পর সরকার বা কোম্পানির পক্ষ হতে জমাকৃত টাকার সাথে আরো টাকা সহ তা কর্মচারীদেরকে প্রদান করা হয়ে থাকে। এ টাকার প্রকৃত মালিক স্বয়ং কর্মচারীই।
তবে চাকরিতে থাকা অবস্থায় সে নিজ ইচ্ছামতো ঐ টাকা খরচ করার কোন অধিকার রাখে না। এ টাকা তার ইখ্‌তিয়ারে নয় বিধায় এ টাকা সরকার বা কোম্পানির নিকট ঋণ হিসাবে গন্য হবে।[ক]


ক. জাদীদ ফিক্‌হী মাসাইল, ১ম খন্ড, মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানী।

Monday 23 April 2012

দেনমহর



বিবাহবন্ধন উপলক্ষে স্বামী বাধ্যতামূলকভাবে স্ত্রীকে নগদ অর্থ, সোনা-রূপা বা স্থাবর সম্পত্তির আকারে যে মাল প্রদান করে সেই মালকে মহর বলে। দেনমহর স্বামীর একটি বাধ্যতামূলক কর্তব্য। আল্লাহ্‌ তা'আলা সম্পদ ব্যয়ের মাধ্যমে পুরুষকে বিবাহ করার নির্দেশ দিয়েছেনঃ
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً
তোমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নারীদেরকে তাদের মহর প্রদান কর। (সূরা নিসা,৪/৪)

মহর সর্বনিম্ন পরিমাণ দশ দিরহাম। মহানবী (সা.) বলেনঃ
দশ দিরহামের কম মহর হতে পারে না।[ক]

মহরের সর্বোচ্চ পরিমানের সীমা নির্ধারিত নেই। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছেঃ
وَإِنْ أَرَدتُّمُ اسْتِبْدَالَ زَوْجٍ مَّكَانَ زَوْجٍ وَآتَيْتُمْ إِحْدَاهُنَّ قِنطَارًا فَلَا تَأْخُذُوا مِنْهُ شَيْئًا
তোমরা যদি এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রী গ্রহনের ইচ্ছা কর এবং তাদের একজনকে অগাধ অর্থও দিয়ে থাকো তবুও তা থেকে কিছুই প্রতিগ্রহন করো না। (সূরা নিসা,৪/২০)

মহর দুই শ্রেনীতে বিভক্ত। যথাঃ
১. মহরে মুসাম্মা (নির্ধারিত),
২. মহরে মিসাল।

বিবাহ সম্পাদনকালে বর-কনের পারষ্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে নির্ধারিত মহরকে 'মহরে মুসাম্মা' বলে। বিবাহের সময় মহরের উল্লেখ না থাকলে অথবা মহর আদৌ নির্ধারন করা না হয়ে থাকলে সেই ক্ষেত্রে স্ত্রীর পিতৃকূলের অন্যান্য মহিলার মহরের পরিমাণ বিবেচনায় রেখে তার জন্য যে পরিমান মহর নির্ধারন করা হয় তাকে 'মহরে মিসাল' বলে।

পরিশোধের সময়সীমার দিক থেকে 'মহরে মুসাম্মা' দুইভাগে বিভক্তঃ
১. মহরে মু'আজ্জাল অর্থাৎ বিবাহের সময় যে মহর নগদ আদায় করা হয় তাকে 'মহরে মু'আজ্জাল' বলে।
২. মহরে মু'য়াজ্জাল অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদ অথবা তাদের কোন একজনের মৃত্যুর কারনে যে মহর পরিশোধ তৎক্ষনাৎ বাধ্যতামূলক হয় তাকে 'মহরে মু'য়াজ্জাল' বলে।

মহর কখন পরিশোধযোগ্য হবে সে সম্পর্কে বিবাহকালে কিছু উল্লেখ্য না করা হলে সম্পূর্ণ মহর দাবী করা মাত্র আদায়যোগ্য হবে।[খ]
বিবাহ হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রী একত্রে নির্জনে মিলিত হওয়ার পূর্বে তালাক সংঘটিত হলে এবং মহর পূর্বে নির্ধারিত হয়ে থাকলে স্ত্রী অর্ধেক মহর প্রাপ্য হবে। যেমন আল্লাহ্‌ তা'আলা ইরশাদ করেনঃ
وَإِن طَلَّقْتُمُوهُنَّ مِن قَبْلِ أَن تَمَسُّوهُنَّ وَقَدْ فَرَضْتُمْ لَهُنَّ فَرِيضَةً فَنِصْفُ مَا فَرَضْتُمْ
তোমরা যদি তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দাও, অথচ তাদের মহর ধার্য করেছ, তাহলে যা তোমরা ধার্য করেছ তার অর্ধেক। (সূরা বাকারা,২/২৩৭)

উপরোক্ত অবস্থায় মহর ধার্য হয়ে না থাকলে স্ত্রী মহর প্রাপ্য হবে না। বরং সে মুতয়া স্বরূপ পরিধেয় বস্ত্র পাবে। যেমন আল্লাহ্‌ তা'আলা ইরশাদ করেছেনঃ
لَّا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِن طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ مَا لَمْ تَمَسُّوهُنَّ أَوْ تَفْرِضُوا لَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَمَتِّعُوهُنَّ 
যে পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের স্পর্শ করেছ এবং তাদের জন্য মহর ধার্য করেছ, তাদেরকে তালাক দিলে তোমাদের কন পাপ নাই। তমতা তাদেরকে মাতা(কিছু উপহার সামগ্রী) প্রদান করবে। (সূরা বাকারা,২/২৩৬)

এখানে 'নির্জনে মিলন' (খালওয়াতে সহীহা) বলতে স্বামী ও স্ত্রীর এমন স্থানে একত্র হওয়া বুঝায় যেখানে তাদের সহবাসে লিপ্ত হতে দৈহিক, প্রাকৃতিক ও আইনগত কোন প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান নেই।

মহর মূলত দেনা স্বরূপ, তা অনাদায়ের ক্ষেত্রে স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীর এই অধিকার রহিত হয় না। সে তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে নিজের মহর উসূল করে নিতে পারে। এমনকি সে তা আদায় করার জন্য স্বামীর পরিত্যক্ত সসম্পত্তি নিজ দখলে রাখতে পারে। মৃতের ওয়ারিসগণের উপর নিজ নিজ অংশ মুতাবিক মহহরের দায় বর্তাবে।


ক. দারা কুত্‌নী, সূত্রঃ হিদায়া, ২য় খন্ড, পৃ. ৩০৪
খ. বাদায়েঊস্‌ সানায়ে (মিসরীয় সং), ২য় খন্ড, পৃ. ২৮৮

Sunday 22 April 2012

অমুসলিমদের সাথে সহাবস্থান



ইসলামী রাষ্ট্রে যে সব অমুসলিম বাস করে তাদের সাথেও সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। মুসলমানদের মত তারাও নাগরিক অধিকার ভোগ করবে। তাদের সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ্‌(সা.) বলেন "মনে রেখ যে ব্যক্তি কোন মুয়াহিদ(চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম) নাগরিকের প্রতি অত্যাচার করে, তাকে কষ্ট দেয়, তার সন্মানহানি করে অথবা তার কোন সম্পদ জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয় তা হলে কেয়ামতের দিন আমি তার বিরুদ্ধ পক্ষ অবলম্বন করবো"।[ক]

এ হাদীস থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ্‌র নবী অমুসলিম নাগরিকদের উপর অত্যাচার করা এবং মালসম্পদ কেড়ে নেওয়াকে কত কঠোর ভাষায় নিষেধ করেছেন। অমুসলিমদের ব্যক্তি স্বাধীনতায় কোন হস্তক্ষেপ করা যাবে না, তারা স্বাধীনভাবে তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করতে পারবে।

এমনকি কোন অমুসলিম রাষ্ট্র সেখানকার মুসলিম নাগরিকদের উপর যতই অবিচার, অত্যাচার করুক না কেন, ইসলামী রাষ্ট্র তার কোন অমুসলিম নাগরিকের প্রতি প্রতিশোধ নিতে পারবে না। সারকথা, বর্তমান মুসলিম সমাজে যে বিবাদ-বিসংবাদ ও কলহ-দন্দ্ব চলছে তা থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রতিটি মুসলমানকে আল্লাহ্‌ ও তার রাসূল(সা.)-এর নির্দেশিত পথ অবলম্বন করে সামাজিক সম্প্রীতি অর্জন করতে হবে এবং পরষ্পর পরষ্পরের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ পরিহার করতে হবে। ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার সাথে সবাইকে বসবাস করতে হবে।


ক. কিতাবুল খারাজ, পৃ. ৮২

Saturday 21 April 2012

শিশুর চরিত্র গঠনে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি



শিশুরাই আগামী দিনের কর্ণধার। কাজেই আদর্শ সমাজ ও উন্নত পরিবেশ গঠন করতে হলে শিশুরা কেমন করে উন্নত চরিত্র এবং অনুপম আদর্শের অধিকারী হতে পারে সে বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হওয়া আবশ্যক। কেননা শিশুদেরকে আদর্শবান করে গড়ে তুলতে না পারলে আদর্শ সমাজ বিনির্মান সম্ভব নয়। যদি কারো আখলাক-চরিত্র নষ্ট হয়ে যায় তবে এর কারনে সে নিজেই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হয় না বরং এ ক্ষতির প্রভাব ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ইত্যাদি সকল কিছু পরিব্যপ্ত হয়ে উপোরক্ত ক্ষেত্রসমূহে বিরাট অকল্যান ডেকে আনে। কাজেই শিশুর চরিত্র গঠনের ব্যাপারে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সদা সচেতন থাকা আবশ্যক। কুরআন ও হাদীসে শিশুদের চরিত্র গঠনের ব্যাপারে জোর তাগিদ রয়েছে। চরিত্র গঠন বলতে তাদের মধ্যে আখ্‌লাকে যমীমা তথা দুষ্ট চরিত্রের প্রতি ঘৃণার মনোভাব সৃষ্টি করা এবং আখ্‌লাকে হামীদা তথা উন্নত চরিত্র মাধুরীর দ্বারা তাদেরকে বিভূষিত করা বুঝায়। যেমনঃ অহংকার, মিথ্যা, ধোঁকাবাজী, গীবত, চোগলখোরী, মূর্খতা, উদাসীনতা, অঙ্গীকার ভঙ্গ করা, কারো প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষন করা ইত্যাদির প্রতি তাদের ঘৃণা সৃষ্টি করা। সাথে সাথে তাদের মাঝে আল্লাহ্‌, রাসূল, ফিরিশতা, আসমানী কিতাব, কুরআন, হাদীস ইত্যাদির প্রতি অগাধ বিশ্বাস সৃষ্টি করা এবং সততা, আমানতদারী, অঙ্গীকার পূরণ করা, দানশীলতা, পিতামাতার এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচার ইত্যাদি মহৎ গুণাবলী শিক্ষা দেওয়া।
রাসূলুল্লাহ্‌ (সা.) ইরশাদ করেনঃ
–কারো সন্তান জন্মগ্রহণ করলে সে যেন তার জন্য একটি সুন্দর নাম রাখে এবং উত্তমরুপে তাকে আদব-কায়দা, শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়।–[ক]

এছাড়াও আরো বহু হাদীসে এ বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ বিদ্যমান রয়েছে।


ক. বুখারী ও মুসলিম, সূত্রঃ মিশকাত, পৃ.৪৫০

অমুসলিমের সাথে বিবাহ



বিবাহর ক্ষেত্রে অমুসলিমগন দুইভাগে বিভক্ত। আহলে কিতাব এবং আহলে কিতাব নয়। আসমানী কিতাব অনুসারীগন ‘আহলে কিতাব’ হিসেবে গন্য। যেমন ইয়াহুদী ও খ্রিস্টান। কুরআন শরীফে এই দুই সম্প্রদায়কে ‘আহলে কিতাব’ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।(সূরা আন’আম,৬/১৫৬)
মহান আল্লাহ্‌ মুসলিম পুরুষদেরকে কেবল ‘আহলে কিতাব’ নারী বিবাহ করার অনুমতি প্রদান করেছেন। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছেঃ


وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِينَ أُوتُواْ الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ

এবং তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদের সচ্চরিত্রা নারী তোমাদের জন্য বৈধ করা হল। (সূরা মায়িদা,৫/৫)

কোন মুসলিম নারীর কোন ‘আহলে কিতাব’ পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া নম্পূর্ণ হারাম। মুসলমানদের জন্য আহলে কিতাব নারী বিবাহ করা বৈধ হলেও স্থান-কাল-পাত্রভেদে তা অপছন্দনীয় বলে ফকীহ্‌গন মত প্রকাশ করেছেন।
যারা আহলে কিতাব নয় তারা মুশরিক এবং কাফির তা যে ধর্মেরই অনুসারী হক। এই পর্যায়ে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, নাস্তিক, অগ্নিউপাসক সকলেই এক পর্যায়ভুক্ত। কাদিয়ানীরা মুশরিক না হলেও মুসলিম উম্মাহ্‌র ঐকমত্য অনুযায়ী কাফির। তাদের সাথে মুসলিম নারী-পুরুষের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন আল্লাহ্‌ তা’আলা চিরতরে, সর্বতোভাবে ও সম্পূর্ণভাবে নিসিদ্ধ করেছেন। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছেঃ


وَلاَ تَنكِحُواْ الْمُشْرِكَاتِ حَتَّى يُؤْمِنَّ وَلأَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِّن
مُّشْرِكَةٍ وَلَوْ أَعْجَبَتْكُمْ وَلاَ تُنكِحُواْ الْمُشِرِكِينَ حَتَّى يُؤْمِنُواْ وَلَعَبْدٌ
مُّؤْمِنٌ خَيْرٌ مِّن مُّشْرِكٍ وَلَوْ أَعْجَبَكُمْ

মুশরিক নারীরা ঈমান না আনা পর্যন্ত তোমরা তাদেরকে বিবাহ করবে না। মুশরিক নারী তোমাদের মুগদ্ধ করলেও
নিশ্চয়ই মু’মিন ক্রীতদাসী তার চেয়ে উত্তম। মুশরিক পুরুষরা ঈমান না আনা পর্যন্ত তাদের সাথে তোমরা(তোমাদের নারীদের) বিবাহ দিবে না। মুশরিক পুরুষ তোমাদের মুগ্ধ করলেও, নিশ্চয় মু’মিন ক্রীতদাস তার চেয়ে উত্তম। (সূরা বাকারা,২/২২১)

Friday 20 April 2012

মদ পানের শাস্তি



সকল ফিকহ্‌ শাস্ত্রবিদের মতে মদ্যপায়ীকে যথার্থ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শাস্তি প্রদান করা ওয়াজিব। ইমাম আযম আবূ হানীফা (র.) এবং ইমাম মালিক (র.)-এর মতে মদ্যপায়ীর শাস্তি আশি বেত্রাঘাত। সাহাবীগণের যুগে আশি বেত্রাঘাতের উপর ঐকমত্য স্থাপিত হয়।[ক]

শাস্তির শর্ত
নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির উপর শরী’আতের -হদ্‌- প্রয়োগের ক্ষেত্রে নিন্মোক্ত শর্তাবলী পাওয়া জরুরীঃ
১. জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া। পাগলের উপর হদ্‌ জারী করা যাবে না।
২. বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া। অপ্রাপ্ত বয়স্কের প্রতি শাস্তি প্রয়োগ করা হবে না।
৩. মুসলমান হওয়া। কাফির ব্যক্তির উপর হদ্‌ প্রযোজ্য নয়।
৪. ইচ্ছাপূর্বক সেবনকারী হওয়া। ভুলবশত সেবন করলে বা জোরপুর্বক সেবন করানো হলে তার উপর হদ্‌ প্রযোজ্য হবে না।
৫. মুযতার বা প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে মদ পান করলে তার উপর হদ্‌ প্রযোজ্য হবে না।[খ]


ক. তিরমিযী, সূত্রঃ মিশকাত, পৃ.১৬৫
খ. তিরমিযী, সূত্রঃ মিশকাত, পৃ.১৬৪