Sunday 13 May 2012

জুয়ার অপকারিতা



জুয়া খেলাতে বহু অপকারিতা রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি নিন্মে তুলে ধরা হলোঃ

১. জুয়ার মধ্যে লাভ ও ক্ষতি উভয়বিধ সম্ভাবনা থাকে। এতে বিজয়ী ব্যক্তির কেবল লাভই লাভ। আর পরাজিত ব্যক্তির ক্ষতিই ক্ষতি। এ খেলায় পরাজিত ব্যক্তির মাল বিজয়ীর হাতে চলে যায়। এতে যে ব্যক্তি লাভবান হয়, সে পরোপকারের ব্রত থেকে দূরে সরে ক্রমেই রক্তপিপাসুতে পরিণত হয়ে পড়ে। জয়লাভকারী ব্যক্তি রাতারাতি টাকার পাহাড় গড়ে তোলে। আর পরাজিত ব্যক্তি দিন দিন সম্পদ হারা হতে থাকে। জুয়াড়ী ব্যক্তির হাতে টাকা-পয়সা না থাকলে সে সম্পদ বিক্রি করে প্রয়োজনে ঘরের সামানপত্র এমনকি ঘর বিক্রি করেও এ খেলায় অংশগ্রহন করে থাকে। তাতেও সম্ভব না হলে চুতি, ডাকাতি করে হলেও খেলায় অংশগ্রহনের চেষ্টা করে থাকে। জুয়া খেলার সাথে চোর-ডাকাতের এবং খারাপ লোকদের সম্পৃক্ততাই সবচেয়ে বেশি। মোটকথা, এ খেলায় যেমন অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়, তেমনি এতে মানুষের চারিত্রিক ক্ষতিও রয়েছে চরমভাবে।

২. জুয়ায় অভ্যস্ত ব্যক্তি ক্রমান্বয়ে উপার্জনের ব্যপারে অলস, উদাসীন ও নিস্পৃহ হয়ে যায়। তার একমাত্র চিন্তা থাকে বসে-বসে বাজির মাধ্যমে অন্যের মাল হাতিয়ে নেওয়া, যাতে কোন পরিশ্রমের প্রয়োজন না হয়। এমনি করে অলস হয়ে তারা দেশ ও দশের উন্নয়নে আর কোন অবদান রাখতে পারে না।

৩. জুয়ার আরেকটি ক্ষতিকর দিক হচ্ছে জুয়াও মদের মতো পরষ্পরের মধ্যে ফ্যাসাদ ও বেদ্বেষ সৃষ্টি করে। কেননা পরাজিত ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবেই জয়ী ব্যক্তির প্রতি হিংসা ও বিদ্বেষ পোষন করে এবং শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। জুয়ার জয়-পরাজয় এক পর্যায়ে মারামারি এমনকি হত্যাকান্ড পর্যন্ত পৌছিয়ে দেয়।

৪. জুয়াড়ী ব্যক্তি জুয়ার নেশায় মদখোর ব্যক্তির ন্যায় মাতাল অবস্থায়ই থাকে সর্বদা। এ কারনে সে ছেলেমেয়ে, স্ত্রী ও আত্মীয় কারোর খবর রাখতে পারে না। ফলে জুয়াড়ী ব্যক্তি তার পরিবার-পরিজনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারে না, ছেলেমেয়েদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত বানাতে পারে না। বরং তারাও পিতার দেখাদেখি ঐ সর্বনাশা খেলায় আংশগ্রহণের প্রয়াস পায়। এমনি করে জুয়াড়ী ব্যক্তির পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়। জুয়ারী ব্যক্তির মেজাজে সর্বদা রুক্ষতা ও নিষ্ঠুরতা বিরাজমান থাকে। লাভবান ব্যক্তি আরো লাভের নেশায় মাতাল হয়ে উঠে। আর পরাজিত ব্যক্তি প্রতিশোধের নেশায় উন্মাদ হয়ে উঠে। তাই স্ত্রী, ছেলেমেয়েদের সাথে বিবাদ, ঝগড়া ও অশান্তি সর্বদা লেগেই থাকে। বর্তমানে স্ত্রী কর্তৃক স্বামী হত্যা বা স্বামী কর্তৃক স্বামী হত্যা, এ জাতীয় লোমহর্ষক ঘটনার পেছনে জুয়ার প্রভাবকে খাটো করে দেখা যায় না।

৫. জুয়ার সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতির দিকটি হলো, এ খেলায় মানুষ আল্লাহ্‌ বিমুখ এবং নামায-রোজা তথা ইবাদত-বন্দেগীর ব্যপারে চরমভাবে উদাসীন ও গাফিল হয়ে যায়। কেননা জুয়াড়ী ব্যক্তির এক্মাত্র ধ্যান-ধারনা, কেমন করে আরো টাকা হাসিল করা যায় অথবা কেমন করে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়া যায়। কাজেই জুয়ার এ সর্বনাশা গ্রাস থেকে বেঁচে থাকা অপরিহার্য।

Saturday 12 May 2012

শরী'আতের দৃষ্টিতে জুয়া



ইসলামী শরী'আতে জুয়া হারাম। একাধিক আয়াত ও হাদীসে এ সম্পর্কে স্পষ্ট বিবরণ রয়েছে। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছেঃ
হে মু'মিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তি পূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণয়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর, তাহলেই তোমরা সফলকাম হতে পারবে। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহ্‌র স্মরণে ও নামায আদায়ে বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না। (সূরা মাদিয়া, ৫:৯০-৯১)।

এ আয়াতে মদ ও জুয়াকে ঘৃণ্য বস্তু আখ্যায়িত করা হয়েছে। এগুলোকে শয়তানের কাজ বলা হয়েছে। মদ ও জুয়াকে একই পর্যায়ভুক্ত করে মূর্তিপূজার সাথে মিলিয়ে বর্ণনা করাআ হয়েছে। আয়াতে এগুলো থেকে দূরে থাকার হুকুম করা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে, এতে পরষ্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। অধিকন্তু এর দ্বারা শয়তান মানুষকে নামায আদায় করা এবং আল্লাহ্‌র স্মরণ থেকে বিমুখ রাখে। কাজেই মদের ন্যায় জুয়াও হারাম। এর হারাম হওয়ার বিষয়টি কুরআন মজীদের অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। যদি কেউ এই হুকুমকে অস্বীকার করে, তবে সে কাফির বলে গণ্য হবে।[ক]

এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ্‌ (সা.) বলেনঃ
কেউ যদি তার সাথীকে বলে, এসো জুয়া খেলব। তাহলে (এ কথার অপরাধের কারনে) সাদাকা করা তার উপর অপরিহার্য।[খ]

অতএব, জুয়াকে অর্থ উপার্জনের উপায় হিসেবে গ্রহণ করা যেমন কোন মুসলমানের জন্য জায়িয নেই, তেমনি একে খেলা, মনের সান্ত্বনা, তৃপ্তি ও অবসর বিনোদনের উপায়রূপে গ্রহণ করাও বৈধ হতে পারে না।


ক. জাওয়াহিরুল ফিক্‌হ, ২য় খন্ড, পৃ. ৩৩৮-৩৩৯।
খ. আল-হালাল ওয়াল-হারাম ফিল ইসলাম, পৃ. ২৯৫।

জুয়ার সংজ্ঞা ও পরিচয়



জুয়াকে আরবীতে 'মায়সির' ও 'কিমার' বলা হয়। বস্তুত মায়সির ও কিমার এমন খেলাকে বলা হয়, যা লাভ ও ক্ষতির মধ্যে আবর্তিত থাকে। অর্থাৎ যার মধ্যে লাভ বা ক্ষতি কোনটাই স্পষ্ট নয়।[ক]

তাফসীরে মা'আরিফুল কুরআনে উল্লেখ রয়েছে যে, যে ক্ষেত্রে কোন মালের মালিকানায় এমন সব শর্ত আরোপিত হয়, যাতে মালিক হওয়া না হওয়া উভয়েরই সম্ভবনা থাকে। ফলে এতে লাভ কিংবা লোকসান উভয় দিকই বজায় থাকে।[খ]
যেমন দুই ব্যক্তি পরষ্পর একে অপরকে বাজি ধরে বলল, যদি তুমি দৌড়ে অগ্রগামী হতে পার, তাহলে তোমাকে এক হাজার টাকা দিব। আর যদি আমি অগ্রগামী হই, তবে তুমি আমাকে এক হাজার টাকা প্রদান করবে। এ ক্ষেত্রে লাভ ও লোকসান অস্পষ্ট। জাহিলী আমলে নানা ধরনের জুয়ার প্রচলন ছিল।

বর্তমান কালে প্রাচীন পদ্ধতি ছাড়াও জুয়ার ক্ষেত্রে আরো বহু নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। যেমন হাউজী, টাকা বাজি রেখে ঘোড় দৌড় ও তাস খেলা ইত্যাদি। এগুলো সবই হারাম। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, শুধু নাম পরিবর্তনের কারনে বস্তুর হাকীকত (মূল প্রকৃতি) এবং হুকুম পরিবর্তন হয় না। কাজেই প্রাচীনকালে প্রচলিত জুয়া সম্পর্কে যে হুকুম প্রযোজ্য ছিল, আধুনিক কালের জুয়ার ক্ষেত্রেও সে হুকুম প্রযোজ্য হবে।


ক. জাওয়াহিরুল ফিক্‌হ, ২য় খন্ড, পৃ. ৩৩৬।
খ. শামী, ৫ম খন্ড, পৃ. ৩৫৫।

উপার্জনের অবৈধ উপায়



ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উপার্জনের প্রক্রিয়া এবং উপার্জিত বস্তু উভয়ই বৈধ ও হালাল হওয়া অপরিহার্য। অনুরূপভাবে, উপার্জনের অবৈধ পন্থা অবলম্বন এবং হারাম বস্তুর উপার্জন থেকে বেচে থাকাও আবশ্যক।

লেনদেনের এমন প্রত্রিয়া যা পাপ অথবা এমন বস্থুর বেচাকেনা করা যার মূলগত দিক অপবিত্র অথবা যে সব লেনদেনে প্রতারনা বা ধোঁকা রয়েছে বা যাতে অন্যের ক্ষতির আশংকা রয়েছে, উপার্জনের এ জাতীয় প্রক্রিয়া ইসলামের অর্থনীতির দৃষ্টিতে হারাম। যেমন সুদ, ঘুষ, জুয়া ও লটারি, প্রতারনা, ওজনে কম দেওয়া, ভেজাল মিশানো, হারাম বস্তুর ব্যবসা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও জবর-দখল এবং মজুতদারী ও কালোবাজারি ইত্যাদি।